লাল খালি ডাকবাক্স 📮
ফেলে আসা এক যুগ আগের চিঠির অপেক্ষা আমি আজো করি । আজো সেই চিঠির খামের উপর ছিটিয়ে দেওয়া বেলী ফুলের সুগন্ধির মিষ্টি সুগন্ধ হাতের তালুতে খুঁজে পাই। ফেলি দেইনি সেই কলমটিকেও যা দিয়ে কিছু বর্ণ সেই চিঠিতে লেখা হয়েছিল। একথা নিজেকে এখনও জিজ্ঞাসা করলে অদ্ভুত রকমের আনন্দ লাগে, শরীরে একধরনের শিরশির অনভূতি সঞ্চালিত হয়, অবশ হয়ে আসে শরীরের শিরায় চলমান উষ্ণ রক্তের চলাচল, আশেপাশের দুঃখের সমাহারে মনে হয় দুঃখ আবার কি? যখন জিজ্ঞাসা করি নিজেকে- আচ্ছা কেন লিখেছিলাম সেই চিঠিটি। তাও আবার এমন কারো কাছে যার কাছে পৌঁছানো প্রায় অসম্ভব। জানা আমার ছিল জবাব আসবে না কখনোই উল্টো ক্রমে, সেই প্রাপকের ঠিকানা হতে এই প্রেরকের ঠিকানাতে। তবুও গোটা বিশেক পাতা ছিঁড়ে, ধুমড়ে মুচড়ে নষ্ট করে, ঘরকে নোংরা করে। পুরো মাস জুড়ে যেই খাতায় বিদ্যালয়ের কঠিন বিষয়গুলো লিখে পাড় করার ছিল, সেখানে আমি একদিনে পুরো অর্ধেক ব্যয় করেছি এক পাতার লেখার জন্য। কেন জীবনের প্রথম প্রিয় লিখেছিলাম কাউকে? কেন অতটা সুন্দর করে খামের মাপে মাপে ভাঁজ করে চিঠিটিকে করেছিলাম ভাঁজ? আমায় তো এই নিয়ম কেউ শিখায় নি! হঠাৎ করেই কেন এতটা জ্ঞানী হয়ে উঠেছিলাম! কেন এর আগে কখনো এতটা মনোযোগ সহকারে সুন্দর, নির্ভুলভাবে লেখার চেষ্টাও করিনি। মাধ্যমিকের পরিক্ষাতেও তো লেখার সময় অতটা সতর্কতা অবলম্বন করিনি। কেন এতটা কষ্ট করেছিলাম? এর উত্তর কি ?
তবে কি জঘন্য রকমের সুন্দর বিষয়- সেই কষ্টের মূল্য আমি আজো পাইনি।
আচ্ছা সব চিঠি কি সত্যিই ডাকপিয়ন পৌঁছে দিতে পারে? নাকি খুব দূরের হলে, কিছু চিঠি মাঝ রাস্তাতেই ছিঁড়ে ফেলে বাড়িতে ফিরে? নাকি এক যুগ ধরে ডাকবাক্স খুলে দেখার সময় পায়নি ডাকপিয়ন। হতেও তো পারে যে তালা মেরেছে সে হারিয়ে ফেলেছি চাবি পৃথিবীর কোনো একখানে। কি হতে পারেনা? অথবা এও তো হতে পারে সে পেয়েছিল চিঠি। উত্তরে পাঠিয়েছে পাল্টা চিঠি। তবে অতি আনন্দে প্রাপকের ঠিকানাটায় করেছে ভুল। তাই আজো পৌঁছায়নি আমার কাছে। তাই, যেমন বসে আছি আমি তার উত্তর পড়ার জন্য সেও অপেক্ষায় আছে আমার উত্তরের জন্য। হয়তো ভাগ্য করেছে কারসাজি। দুজনেই অপেক্ষায় আছি উত্তরের। মাঝে পরে আছে খালি এই ঝংকার পরা, তালা লাগানো লাল ডাকবাক্স খালি।
Comments
Post a Comment